অলিম্পিয়াড কি? বাংলাদেশে যেসকল অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়
অলিম্পিয়াড কি, বাংলাদেশে যে সকল অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়।
আজকাল স্কুল, কলেজে এবং অনলাইনে অলিম্পিয়াড শব্দটি একটু বেশি শোনা যাচ্ছে। বন্ধু এবং সিনিয়রর সবাইকেই দেখা যায় বিভিন্ন অলিম্পিয়াডের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ অলিম্পিয়াড জিনিসটাইবা কি! কিভবে অংশগ্রহণ করে? কিভাবে প্রস্তুতি নেয়? বাংলাদেশে কি কি অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়? আপনার মাথায়ও যদি এ ধরনের প্রশ্ন গুড় পাক খায়, তাহলে এই লেখাটি পড়লেই সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। তাহলে চলুন শুরু করা যাক-
অলিম্পিয়াড কি?
সাধারণত অলিম্পিয়াড বলতে বোঝায় একটি নির্দিষ্ট একাডেমিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্রে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা যেখানে সাধারণত একাধিক শিক্ষার্থী বা প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। । এই প্রতিযোগিতাগুলি প্রায়শই গণিত, বিজ্ঞান এবং ভাষা শিল্পের মতো বিষয়গুলিতে তাদের দক্ষতা এবং জ্ঞান প্রদর্শনের জন্য বিশ্বজুড়ে মেধাবী শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়। অলিম্পিয়াডগুলি আন্তর্জাতিক, জাতীয় বা আঞ্চলিক স্তর, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও অনুষ্ঠিত হতে পারে। এতে একাধিক রাউন্ডে প্রতিযোগিতা, লিখিত পরীক্ষা এবং অন্যান্য মূল্যায়ন পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। একটি অলিম্পিয়াড জেতাকে একটি কৃতিত্ব হিসাবে দেখা হয় এবং এটি শিক্ষা বা কর্মজীবনে অগ্রগতির সুযোগ খুলে দিতে পারে। বাংলাদেশে গণিত, বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান,প্রোগ্রামিং, তথ্য প্রযুক্তি ইত্যাদি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে প্রতি বছর বিভিন্ন অলিম্পিয়াড আয়োজিত হয়।
গণিত অলিম্পিয়াড কি?
গণিত অলিম্পিয়াড বা গণিত উৎসব বলতে মূলত ‘বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড’ কে বুঝায় বুঝায়। যা BDMO নামেও পরিচিত । এটি বাংলাদেশের তৃতীয় থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য গণিত বিষয়ের উপর সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতা। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের (IMO) বাংলাদেশকে প্রতিনিধিকারী দল নির্বাচনের লক্ষ্যে দেশব্যাপী আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড বা গণিত উৎসবের নিবন্ধন চলে বছরের ডিসেম্বর মাস জুড়ে এবং অলিম্পিয়াড পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় বছরের প্রথম মাস অর্থৎ জানুয়ারী মাসের শুরুর দিকে।
ফিজিক্স অলিম্পিয়াড কি?
ফিজিক্স অলিম্পিয়াড বা পাদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড হল ‘আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড’ এ বাংলাদেশকে প্রতিনিধিকারী দল নির্বাচনের লক্ষ্যে দেশব্যাপী আয়োজিত একটি বার্ষিক পাদার্থবিজ্ঞান প্রতিযোগিতা। যেখানে গণিত অলিম্পিয়াডের মতো তৃতীয় থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারে। ২০১১ সাল থেকে প্রতিবছর ডিসেম্বর – জানুয়ারি মাসের মধ্যে বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে এই প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশে যেসকল অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয় (All Olympiad in Bangladesh)
বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরণের অলিম্পিয়াড আয়োজন করা হয়, যা সাধারণত বিজ্ঞান, গণিত, তথ্যপ্রযুক্তি, এবং ভাষা বিষয়ক হয়। কিছু প্রধান অলিম্পিয়াডের বিস্তারিত দেওয়া হলো :
- বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড (Bangladesh Mathematics Olympiad)
- বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড (Bangladesh Physics Olympiad)
- বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড (Bangladesh Biology Olympiad)
- বাংলাদেশ কেমিস্ট্রি অলিম্পিয়াড (Bangladesh Chemistry Olympiad)
- বাংলাদেশ ইনফরম্যাটিক্স অলিম্পিয়াড (Bangladesh Informatics Olympiad)
- ইন্টার স্কুল বাংলা অলিম্পিয়াড (Inter School Bangla Olympiad)
- বাংলাদেশ বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড (Bangladesh Science Olympiad)
- বাংলাদেশ জ্যোর্তিবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড (Bangladesh Astronomy Olympiad)
- বাংলাদেশ রোবোটিক্স অলিম্পিয়াড(Bangladesh Robotics Olympiad)
- বাংলাদেশ আইসিটি অলিম্পিয়াড (Bangladesh ICT Olympiad)
- ওয়াইল্ডলাইফ অলিম্পিয়াড (Wildlife Olympiad)
- জিরো অলিম্পিয়াড (Zero Olympiad)
- নিউজপেপার অলিম্পিয়াড (Newspaper Olympiad)
কেন অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করা উচিৎ
অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করা শিশুদের মূল্যবান দক্ষতা এবং জ্ঞান বিকাশে, আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে, একাডেমিক কর্মক্ষমতা উন্নত করতে এবং স্কলারশিপ এবং আন্তর্জাতিক এক্সপোজারের জন্য নতুন সুযোগ খুলতে সাহায্য করতে পারে।
একজন শিক্ষার্থীর যেসকল কারণে অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করা উচিৎ:
ক. সমস্যা সমাধান দক্ষতা বৃদ্ধি:
- জটিল সমস্যা বিশ্লেষণ ও সমাধানের দক্ষতা বাড়ায়।
- লজিক্যাল থিংকিং ও ক্রিটিক্যাল থিংকিং বাড়াতে সহায়তা করে।
খ. সৃজনশীলতা ও চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি:
- অপ্রচলিত ও নতুন পদ্ধতিতে সমস্যার সমাধান করতে শেখায়।
- সৃজনশীলভাবে গণিতের ধারণা প্রয়োগ করার সুযোগ দেয়।
গ. আত্মবিশ্বাস ও মানসিক উন্নয়ন:
- কঠিন সমস্যার সমাধান করে আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।
- ব্যর্থতা ও সাফল্য উভয়কেই ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করতে শেখায়।
ঘ. আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ:
- আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড (IMO)-এর মতো প্ল্যাটফর্মে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ।
- বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন।
ঙ. পড়াশোনায় সহায়তা:
- বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান,প্রোগ্রামিং এবং গণিতের মূল ধারণাগুলি গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করে।
- স্কুল ও কলেজের পাঠ্যক্রমের বাইরের জ্ঞান অর্জন।
চ. ক্যারিয়ার ও উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি:
- বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিত (STEM) বিষয়ক ক্যারিয়ারে সহায়ক।
- স্কলারশিপ ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ বাড়ায়।
ছ. সামাজিক ও নেটওয়ার্কিং সুবিধা:
- একই আগ্রহসম্পন্ন বন্ধুদের সঙ্গে পরিচিতি।
- বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান,প্রোগ্রামিং গণিতপ্রেমীদের একটি বড় সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ।
জ. প্রেরণা ও নেতৃত্বগুণ:
- লক্ষ্য নির্ধারণ ও পরিশ্রম করার অনুপ্রেরণা দেয়।
- ভবিষ্যতের গণিত শিক্ষায় নেতৃত্বের সুযোগ তৈরি করে।
সুতরাং, অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ শুধু সার্টিফিকেট এর জন্যই নয়, বরং ব্যক্তিগত, শিক্ষাগত ও পেশাগত উন্নয়নের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অলিম্পিয়ার সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।